ছবি : সংগৃহীত
ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় নির্মিত আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে বিদ্যুৎ কেনা শুরু করে বাংলাদেশ। তবে সরবরাহ শুরুর আগেই আদানির ধরা কয়লার দাম নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়।
বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে আদানি খরচের একটি হিসাব করে। সে অনুযায়ী বিল তৈরি করে। কিন্তু সেই বিল তৈরির ক্ষেত্রে কয়লার দাম বাড়িয়ে ধরা হয়। পিডিবি কয়লার চড়া দর দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর দাম কমাতে রাজি হয় আদানি। বাংলাদেশের পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে দামে বিশ্ববাজার থেকে কয়লা কেনা হয়, তার চেয়ে কম দাম ধরার প্রতিশ্রুতি দেয় তারা। বছরখানেক সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কয়লার দাম ধরেছে তারা। তবে গত বছরের জুলাই থেকে আবার কয়লার বাড়তি দাম ধরে বিল জমা দিচ্ছে আদানি। এতে বাংলাদেশের পায়রা ও রামপালের চেয়ে আদানির কয়লার দর ২০ শতাংশের মতো বেশি পড়ছে।
পিডিবি সূত্র বলছে, পায়রা ও রামপালের চেয়ে প্রতি টন কয়লার দাম ১৫ থেকে ২০ ডলার বাড়তি চায় আদানি। পিডিবির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তিতে উল্লেখ করা সূত্রের সুযোগ নিয়ে এভাবে বাড়তি দাম চাইছে তারা। অবশ্য বিল পরিশোধের সময় কয়লার বাড়তি দাম আমলে নিচ্ছে না পিডিবি।
সূত্র বলছে, বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের চুক্তিতে কয়লার দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া (নিউক্যাসল ইনডেক্স) ও ইন্দোনেশিয়ার ইনডেক্স (সূচক) বিবেচনায় নেওয়ার কথা। এই দুই সূচকের গড় ধরে কয়লার দাম নির্ধারণ করা হবে। আদানি জুলাই থেকে সে অনুযায়ী বিল জমা দিচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়া বিশ্বে কয়লার বড় রপ্তানিকারক। তাদের কয়লার দাম নিয়মিত অনলাইন সূচকে প্রকাশ করা হয়। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ঘোষিত দামের আড়ালে বিশেষ ছাড় থাকে। কয়লা কেনার সময় সমঝোতার ওপর ছাড়ের বিষয়টি নির্ভর করে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লা কেনে বিশেষ ছাড়ে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কম হয়। সূত্র জানিয়েছে, আদানি বিশেষ ছাড়ে কয়লা কিনলেও বিদ্যুতের দাম ধরার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ছাড় দিতে রাজি নয়।
আদানির সঙ্গে পিডিবির চুক্তি পর্যালোচনায় সরকারের গঠিত একটি কমিটি কাজ করছে। কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আদানির সঙ্গে করা পিডিবির চুক্তিটি ‘অসম’। চুক্তিতে আদানিকে বেশ কিছু সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, চুক্তিতে উল্লেখ করা কয়লার দামের সূত্র দেখে মনে হয়েছে, বিদ্যুৎ নয়; মূলত কয়লা বিক্রি করেই ব্যবসা করতে চেয়েছে আদানি।
পিডিবি ও আদানির প্রতিনিধিদলের মধ্যে গত সপ্তাহে একটি অনলাইন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তাতে কয়লার দাম নিয়ে আলোচনা তোলে পিডিবি। বৈঠক সূত্র বলছে, কয়লার দামে আমদানি পর্যায়ে ছাড়ের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদানিকে আগের মতো কয়লার ন্যায্যমূল্য ধরার জন্য বলা হয়। তারা এ নিয়ে কোনো মতামত দেয়নি। লিখিত প্রস্তাবের পর আলোচনার কথা জানিয়েছে।
পিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইন বৈঠকে পিডিবির প্রস্তাব আদানি নাকচ করেনি। আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিতে বলেছে তারা। এরপর এ নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে যেটি চূড়ান্ত হবে, সেই হিসেবে বিল পরিশোধ করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত কয়লার দাম আগের মতো ধরেই বিল পরিশোধ করছে পিডিবি।
মতামত