কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ও জেলা পর্যায়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে মামলা বাণিজ্য নিয়ে চরম দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। কয়েকজন সমন্বয়ক দাবি করেছেন, জেলা আহ্বায়ক মো. সাকিব হোসেনের চাপেই মো. এমরান হোসেনের মাধ্যমে একটি মামলা করানো হয়, যা পরবর্তীতে বাণিজ্যের অংশে পরিণত হয়েছে।
গতকাল ১৬ মে রাতে কয়েকজন সমন্বয়ক সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। তবে মামলা বাণিজ্য নিয়ে পাল্টা অভিযোগ করেন জেলা আহ্বায়ক মোহাম্মদ সাকিব হোসাইন।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় হামলার অভিযোগে এমরান হোসেন একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৯৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়, যাদের মধ্যে তিনজন ইতোমধ্যে মৃত। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ১৫০–২০০ জনকে আসামি করা হয়। এই মামলা ঘিরেই শুরু হয় বিতর্ক।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. এমরান হোসেন বলেন,“কেউ যদি তার ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল বা টাকার বিনিময়ে আমাকে দিয়ে মামলা করিয়ে থাকে, আমি তা তীব্রভাবে ঘৃণা করি। আমাকে দিয়ে যে মামলাটি করানো হয়েছে, সেটি করেছেন কুমিল্লা জেলা আহ্বায়ক সাকিব হোসেন ভাই। মামলা করা হয়েছে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায়। এ মামলা নিয়ে কেউ যদি অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে, তার দায়ভার আমি নেব না।
মামলা করার দীর্ঘদিন পর কেনো এসব বিষয় এখন প্রকাশ করছেন এমন প্রশ্নে এমরান বলেন, আমি প্রতিনিয়ত শুনতে পাচ্ছি কিন্তু সেটা বলার স্কোপ পাচ্ছি না৷ এখন যেহেতু দেখতে পাচ্ছি যে আমাদের নাম ব্যবহার করে যত অপকর্ম করছে তাহলে সেটার দায়ভার আমি কেন হাইড (লুকিয়ে) রাখবো৷ মামলা করানোর ক্ষেত্রে আমাকে এক ধরনের ফোর্স করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কুবির আরেক সমন্বয়ক পাভেল রানা বলেন,“এ মামলায় এমরান ছাড়াও আরও কয়েকজনের নাম আছে, যাদের আমি চিনি না। যদিও মামলার একমাত্র বাদী এমরান। মামলায় তার নাম দেওয়ার পর আমরা শুনতে পাই, এটি নিয়ে বাণিজ্য হচ্ছে। পরে এমরান এসে আমাকে বলে—‘বন্ধু, এখন কী করা যায়?’ তখন আমি বলি, আমাদের এক ভাই আছে—তরিকুল ভাই। তিনি আইনজীবী, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে মামলা বন্ধ করার উপায় খোঁজা যেতে পারে।”
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা জেলা আহ্বায়ক মো. সাকিব হোসেন বলেন, “মামলা বাণিজ্য করে থাকতে পারে বাদী, বিবাদী কিংবা প্রশাসন। আমি কোনো মামলার সঙ্গে জড়িত নই।”
এই ঘটনা কুমিল্লায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের ভেতরে অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও নেতৃত্ব সংকটকে আরও প্রকট করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা।
মতামত