ছবি : ছবি: সংগৃহিত
মানুষ জন্মগতভাবেই চিন্তাশক্তির গুণ নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে৷ তাই‚ অন্যান্য প্রাণীদের থেকে‚ ‘বুদ্ধিবৃত্তি’ নামক বিভেদক গুণটিই মানুষকে আলাদা করে জানান দেয় যে মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিক প্রাণী। এজন্য মানুষ হিসেবে জীবনধারণের পাশাপাশি জ্ঞানচর্চারও সমান গুরুত্ব রয়েছে। জ্ঞানের প্রতি মানুষের যে অবারিত ক্ষুধা সেটি নিবারন করে জ্ঞানচর্চার দ্বার উন্মোচনে সহায়ক হতে পারে ‘দর্শন চর্চা’। ‘দর্শন’ শব্দটিকে একটি ‘রাশভারী’ শব্দ মনে হলেও দর্শন আমাদের জীবনের সবচেয়ে মৌলিক প্রশ্নগুলোর উত্তর খোজারই একটি প্রয়াস। অর্থাৎ দর্শন শব্দটি আমাদের জীবনবোধের সবচেয়ে নিকটে অবস্থান করে।
বুৎপত্তিগতভাবে‚ গ্রিক শব্দ ‘ফিলোস’ এবং ‘সোফিয়া’ থেকে ‘ফিলোসোফি’ শব্দটি এসেছে। যার অর্থ জ্ঞান বা প্রজ্ঞার প্রতি অনুরাগ। বলা হয়ে থাকে যে পিথাগোরাস সর্বপ্রথম ফিলোসোফি শব্দটির উদ্ভাবন করেন। ফিলোসোফির বাংলা পরিভাষা হলো ‘দর্শন’। দর্শন হলো হলো নান্দনিকতা‚ অস্তিত্ব, জ্ঞান, মূল্যবোধ, কারণ, বাস্তবতা‚ মন এবং ভাষা সম্পর্কে মৌলিক প্রশ্নগুলোর অধ্যয়ন।
দর্শনচর্চা আমাদের মননের গভীরে প্রবেশ করিয়ে জ্ঞানের আলোকিত দুয়ার খুলতে সহায়তা করে। দার্শনিক চিন্তার এই সিলসিলা যা হাজার বছরের প্রাচীন‚ সময়ের স্রোতে মানুষের মনের জটিল সব প্রশ্নের উত্তর করতে সহায়তা করে। দর্শন আমাদের মুক্ত ও মননশীল চিন্তার অবারিত সুযোগ তৈরি করে দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয় কেবল জ্ঞান প্রদান নয় বরং জ্ঞান তৈরি করার জায়গা। যেকোন প্রকারের পদ্ধতিগত জ্ঞান তৈরি করতে একজন অনুসন্ধিৎসু শিক্ষার্থী বা শিক্ষককে দর্শনের দ্বারস্থ হতেই হবে। তাছাড়া ক্রিটিক্যাল থিংকিং এবং মুক্তচিন্তার বিকাশঘর হিসেবে গড়ে তুলতে হলে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দর্শন চর্চা হওয়াটা অত্যাবশকীয়।
‘দর্শন’ বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত‚ যেমন: মেটাফিজিক্স‚ যা অস্তিত্ব‚ বাস্তবতা ও মহাবিশ্বের প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করে। এপিস্টেমোলজি‚ যা জ্ঞান‚ বিশ্বাস কিংবা নির্ভুলতার সূত্র নিয়ে আলোচনা করে। এথিক্স‚ যা নৈতিকতার মৌলিক নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করে। লজিক‚ যা সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঠিকতা ও তর্কের বুনিয়াদি বিষয়ে আলোচনা করে। এস্থেটিকস‚ যা সৌন্দর্যজ্ঞান ও শিল্প নিয়ে আলোচনা করে।
জ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিচরণরত এই দর্শন চর্চার মাধ্যমেই জীবন-জগতকে ভিন্নভাবে জানার সুযোগ হবে। দর্শনের পথে যাত্রার মাধ্যমে সত্যানুসন্ধানে উদ্ধুদ্ধ হয়ে স্বার্থপরতা ও গোঁড়ামি মুক্ত একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা সম্ভব৷ কেননা দর্শন আমাদের প্রশ্ন করতে উদ্দীপনা যোগানোর মাধ্যমে একটি বিষয়কে বিভিন্ন দিক থেকে দেখতে ও বুঝতে সহায়তা করে। ক্রিটিক্যাল থিংকিং ও স্বাধীন চিন্তার বিকাশ ঘটায়। পাশাপাশি জীবনের গভীরতম সত্য খোঁজার পথ দেখায়। আমাদের চিন্তা যখন কোন নির্দিষ্ট প্রশ্নে আটকে যায় তখন দর্শন এসে সম্ভাব্য বিকল্প দৃষ্টান্ত দেখিয়ে চিন্তাকে গতিশীলতা প্রদান করে।
তাই বলা চলে যে‚ জ্ঞানের দ্বার উন্মোচিত করতে চিন্তাজগতের এক অমীয় যাত্রা হলো দর্শনচর্চা। আমাদের জীবনবোধের বুনিয়াদ বা মৌলিক ভিত্তি হলো দার্শনিকতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের বিচিত্র ভূবনে গতিশীলতা প্রদর্শন করতে দর্শন চর্চার বিকল্প নেই।
মতামত