কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) মাদকসেবনের ঘটনা এখন আর নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের অভিযানের পরও নানা স্থানে মাদকসেবন অব্যাহত রয়েছে। ক্যাম্পাসে মাদকসেবীদের পরিচয় কারও অজানা নয়, তবে কেউই মুখ খুলছেন না। পরিচিতদের এই নীরবতা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার, লালন চত্বর, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির পেছনে, আবাসিক হলগুলোর কক্ষ ও ছাদে নিয়মিত মাদকসেবনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিজয় ২৪ হলের নতুন ব্লকের ৪র্থ তলার দুইটি রুম, পুরাতন ব্লকের ৫ম তলার ১টি রুম ও নিচতলার ১টি রুম, কাজী নজরুল ইসলাম হলের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা ৩টি রুম, শহিদ ধীরেন্দ্র দত্ত হলের ছাদে ও বিভিন্ন ব্লকের কয়েকটি রুমে মাদকসেবনের অভিযোগ রয়েছে।
প্রশাসনের পদক্ষেপে কারণে বর্তমান ক্যাম্পাসে মাদকের উপস্থিতি কিছুটা কমলেও তা স্থানান্তর হয়েছে নতুন জায়গায়। বর্তমানে সামাজিক বনায়নের ভিতর, নতুন ক্যাম্পাস এলাকা, ম্যাজিক প্যারাডাইস সংলগ্ন অঞ্চল এবং সিসিএন বিশ্ববিদ্যালয় সড়কে মাদকসেবনের প্রবণতা বাড়ছে।
অর্থনীতি বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাইমুর রহমান বলেন, “ক্যাম্পাসে মাদক সেবন এখন ওপেন সিক্রেট। প্রশাসনকে জানানো হলেও তারা লিখিত অভিযোগ চেয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করে। অথচ তাদের উচিত নিজ উদ্যোগে নিয়মিত নজরদারি ও সুষ্ঠু তদন্ত করা। প্রশাসনের এই নির্লিপ্ততায় মাদকসেবীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে, ফলে হলে নতুন শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ক্যাম্পাসের পরিবেশ ভবিষ্যতে আরো খারাপের দিকে যাবে।”
শিক্ষার্থীরা যেন সহজে মাদকসেবীদের পরিচয় প্রকাশ করতে পারে এ বিষয়ে শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের প্রভোস্ট মো. জিয়া উদ্দিন বলেন, "আমি হলে যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছি, সেগুলো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরামর্শ করে নেয়া হয়েছে । আমি যেসব তথ্য পেয়েছি, তার অধিকাংশই শিক্ষার্থীদের মাধ্যমেই এসেছে। হলে শুধু মাদকের বিষয়েই নয়, যেকোনো সমস্যার অভিযোগ আমাকে দেওয়া হলে অভিযোগকারীর নাম ও পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয়। তাই সবাই আমাকে নির্ভয়ে জানাতে পারে। আমরা অভিযোগকারীদের এমন উদ্যোগকে প্রশংসা করি।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল হাকিম বলেন, ‘আমরা পুলিশকে ক্যাম্পাসের বাইরে টহলের জন্য বলেছি। আমাদের কাছে কিছু নামও রয়েছে। কেউ চাইলে নিজের নাম গোপন রেখে মাদকসেবীদের পরিচয় দিতে পারে।’
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে সুনীতি শান্তি হলের শিক্ষার্থীরা রাবিনা ঐশি, লাবিবা ইসলাম, আতিফা লিয়া ও মাইশা রহমান রোদিতার বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগ দিলে, পরে তাদের হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া মাদকসহ ধরা পড়ায় এমবিএ শিক্ষার্থী তাকভির আল মাহমুদ ও সাইদ উদ্দিন আহমেদকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
মতামত