আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া শুধু মুসলিম বিশ্বের ঐক্য দিয়ে ফিলিস্তিনের গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর এফডিসিতে গাজা রক্ষায় মুসলিম বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, মার্কিনিরা চাইছে গাজাবাসীকে তাদের ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত করে বিনোদনকেন্দ্র স্থাপন করতে। গাজায় যা হচ্ছে তা অমানবিক, বর্বর ও চরম নিষ্ঠুরতা।
স্বজ্ঞানে একটি জাতিকে নিধনের চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তেলের প্রধান উৎপাদক এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও অন্যান্য দেশ, তাই বর্তমানে তেলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার সক্ষমতা মুসলিম বিশ্বের নেই। মুসলিম বিশ্ব এখন এককভাবে তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে না তাই এই বিষয়টি দিয়ে চাপ প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। ফলে শুধু মুসলিম বিশ্বের ঐক্য দিয়ে গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়, এরসঙ্গে দরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা।
বাংলাদেশের পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সব দেশের জন্য প্রযোজ্য’ বাক্যটি পুনরায় সংযোজন করা অন্তর্বর্তী সরকারের বাস্তব সম্মত সিদ্ধান্ত যার মাধ্যমে দেশের মানুষের জনমতের প্রতিফলন ঘটেছে বলেও মন্তব্য করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ফিলিস্তিন আজ গভীর সংকটে। রক্তে ভাসছে গাজা। ইসরায়েলি গণহত্যার হাত থেকে নারী—শিশু, চিকিৎসক, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক কেউই রেহাই পাচ্ছে না। গাজাকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করা হয়েছে। মৃত্যুপুরি গাজায় খাদ্য নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, ওষুধ নেই, চিকিৎসা নেই। আছে শুধু ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মানুষের বেঁচে থাকার আকুতি। হাসপাতালে, পথেঘাটে লাশের সারি।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, আন্তর্জাতিক চাপে যতটুকু ত্রাণ দেওয়া হয়েছে গাজায় তার চেয়েও বেশি অশ্রু ও রক্ত ঝরেছে। কিন্তু যে যৎসামান্য মানবিক ত্রাণসহায়তা দেওয়া হতো তাও এখন বন্ধ রেখেছে ইসরায়েল। বাংলাদেশের মানুষ ফিলিস্তিনের পক্ষে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সমর্থন করা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো বিভক্তি নেই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে ফিলিস্তিন বাসীর এই লড়াই একার কোনো লড়াই নয়। গাজার মানুষের সমর্থনে বাংলাদেশে ‘মার্চ ফর গাজা’ প্রমাণ করেছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এ লড়াই আমাদেরও লড়াই। সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। চিৎকার করে গাজা বাসীর সমর্থনে চোখের পানি ফেলেছে। সমাবেশে আমাদের অনেক তরুণ গাজার সমর্থনে যুদ্ধে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিশ্ব বিবেকের কাছে বাংলাদেশের মানুষ এই সহিংসতা বন্ধের জোর দাবি জানিয়েছে।
তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের সংকট নিরসনে ওআইসি গঠিত হলেও তাদের এই চরম দুর্দিনে সংস্থাটি চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। আরব লিগও কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। জাতিসংঘের নিজস্ব শক্তি বলতে কিছু নেই। পাঁচটি মোড়ল রাষ্ট্রের উপর তারা নির্ভরশীল। তবে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন এই দুটি রাষ্ট্র পাশাপাশি শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করতে পারে তার জন্য জাতিসংঘের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোকে পাশে নিয়ে জাতিসংঘ ইসরায়েল ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতা উদ্যোগ নিতে পারে। এ জন্য মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
মতামত