ছবি : ঢাকা ইনসাইটস
বাংলা নববর্ষ মানেই বাঙালির জন্য আনন্দঘন এক নাগরিক উৎসব। নববর্ষ বরণ করতে বাংলাদেশ মুখর ছিলো বর্ণিল সাংস্কৃতিক আয়োজনে।
পহেলা বৈশাখে এবার ঢাকার বড় মঞ্চে গান পরিবেশন করেছেন নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার বাউল শিল্পী আরজ আলী।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির বাস্তবায়নে ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে আয়োজিত কনসার্টে গান গেয়ে সবাইকে মাতিয়েছেন তিনি। জীবনে প্রথমবারের মতো এতো বড় মঞ্চে গান গাওয়ার সুযোগ পেয়ে আরজ আলী তার স্বপ্ন ছুঁয়েছেন। এই আয়োজনে একই মঞ্চে দেশের জনপ্রিয় শিল্পী এবং ব্যান্ডদল গান পরিবেশন করে।
নববর্ষের এই কনসার্টে আরজ আলীর পরিবেশনা দর্শক শ্রোতাদের মাতিয়েছে বেশ।
জাহিদ নীরব ফিচারিং আরজ আলী ও রাকিব হাসানের গানের পরিবেশনায় গলা মিলিয়েছেন হাজারো দর্শক।
বর্ষবরণের এই নন্দিত আয়োজনে ঢাকার বড় মঞ্চে অজপাড়াগাঁয়ের একজন বাউল আরজ আলীকে পেয়ে দর্শকরা তুমুল সাড়া দিয়েছেন। শিল্পীর পরিবেশনা আর দর্শকের চিত্তবিনোদন মিলে সকল উন্মাদনা যেন এক হয়ে গিয়েছিলো মানিক মিয়া এভিনিউতে। তাইতো মুঠোফোনে স্মৃতি ধরে রাখলেন অনেকেই।
নেত্রকোণার সুসঙ্গ দুর্গাপুরের সাদামাটির পাহাড়ের আঙিনা থেকে রাজধানীর মঞ্চ,যাত্রাটা আরজ আলীর কাছে স্বপ্নের মতোই। এই জার্নিতে তার এতদূর আসার পেছনে বড় অবদান রয়েছে শিল্পী রাকিব হাসানের। তিনি এই পথের বাউলকে চিনিয়েছেন রাজপথ। তারপর ঢাকায় একসাথে প্র্যাকটিস করা,আড্ডা দেয়া অথবা গানের ফাঁকে কথার ঝড়। অবশেষে এক মঞ্চে দর্শক মাতানো। যেন এক রূপকথার গল্পের মতোই।
এই গল্পের স্বপ্ন সত্যি হবার পথে সহযোগিতা করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। খুব আদুরে ঢঙে তাইতো ফেসবুকে লিখেন "উস্তাদ আরজ আলী"।
ইতিহাস ঐতিহ্যের সুসঙ্গ দুর্গাপুরের পথে প্রান্তরে যে আরজ আলী গান গেয়ে বেড়াতেন আজ তিনি রীতিমতো সেলিব্রেটি। দেশের নানা শ্রেণীপেশার মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন এই বাউল শিল্পী। জীবনের অপরাহ্নে এসে তার শেকড় থেকে শিখরে পৌঁছে যাওয়াটা সত্যিই মানুষের কাছে এক চমৎকার অনুভূতি। সাম্প্রতিক সময়ের আগে কখনোই সেভাবে ঢাকা শহর না দেখা মানুষটি এবার মাতালেন কত শত শহুরে মানুষকে। তাকে দেখলে সবাই এখন গান শুনতে চায়,খুব যত্ন করে তুলতে চায় এক মুহূর্তের সেলফি।
জীবনভর গানকেই ধ্যানজ্ঞান করা আরজ আলী তো দিনশেষে একজন সত্যিকারের সেলিব্রেটি। সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তাই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলেন এভাবে - "আরজ আলী চাচাকে লক্ষ মানুষের সামনে গাইতে দেখা চোখের জন্য এক পরম শান্তি। দেশের হাটে-মাঠে-বাটে এরকম হাজার হাজার প্রতিভা আছে। এই শক্তিটাকে কাজে লাগানোর উপায় আছে। আমরা একটা কাঠামো তৈরি করতে পারি যেটা শুধু যে বাংলাদেশের ইমেজ বিল্ডিংয়ে হেল্প করবে তা না, আমাদের শিল্পীরা ভালো রেভিনিউ জেনারেট করতে পারবে।
আমার ব্যক্তিগত বিবেচনায়,গান হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী কালচারাল অ্যাসেট। বাংলাদেশকে বাইরের দুনিয়ায় গানের দেশ হিসাবে প্রজেক্ট করতে পারলে সবচেয়ে বড় কাজ হবে।"
নববর্ষের এই কনসার্টে গান পরিবেশন শেষে আরজ আলীর মুগ্ধতা ফুটে ওঠে তার অভিব্যক্তিতে। পরিবেশনা শেষে বললেন,"সকলের প্রতি আমার সালাম। ভালো থাকবেন। আবার দেখা হবে।"
শেকড়ের শিল্পী আরজ আলীর সাথে বারবার দেখা হোক নাগরিক আয়োজনের মঞ্চে অনেক গানের কোলাহলে,এমনটাই চাওয়া অসংখ্য শ্রোতা দর্শকের।
মতামত