সারাদেশ

ধর্ষণকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে নরসিংদীতে মানববন্ধন

প্রিন্ট
ধর্ষণকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে নরসিংদীতে মানববন্ধন

ছবি : ঢাকা ইনসাইটস


প্রকাশিত : ১১ এপ্রিল ২০২৫, রাত ৯:২২

নরসিংদীতে ষষ্ঠ শ্রেণির দুই ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় প্রভাবশালীদের প্রভাব কাটিয়ে থানায় মামলা হলেও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। 

ধর্ষণকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে আজ শুক্রবার (১১ এপ্রিল) জুমার নামাজের পর রায়পুরা উপজেলার চরআড়ালিয়া ইউনিয়নের বাঘাইকান্দি গ্রামের কাজী বাড়ির মোড়ে সর্বস্তরের জনগণ মানববন্ধন করেছে। 

এসময় অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে বিভিন্ন প্লাকার্ড নিয়ে ছোট থেকে বড় সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। তারা ২৪ ঘন্টার মধ্যে আসামীদের গ্রেপ্তার না করা হলে নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করারও হুশিয়ারি দেয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ধর্ষক ইমরান, রাজ্জাক, আব্দুর রহমান, সাইফুল মিয়া, রমজান, কাইয়ুম ও তার দুই সহযোগী এলাকার চিহ্নিত অপরাধী। তারা বিভিন্ন অসামাজিক কাজ সহ মাদক কারবারের সাথে জড়িত। তাদের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। 

এতদিন তাদের দ্বারা অত্যাচারের পরও ভয়ে কেউ মুখ খোলেনি। কিন্তু ৬ষ্ঠ শ্রেণীর দুই ছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের এমন ঘৃণ্য কাজে এলাকাবাসীর ভয় কেটে গেছে। তারা এই অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছে। অনতিবিলম্বে ধর্ষণের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে তাদের ফাঁসি দেওয়া হোক। তা না হলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে। 

মানববন্ধনে ভুক্তভোগী একজনের বাবা বলেন, আমার মা মরা এতিম মেয়ে। সে এখনও বাচ্চাদের সাথে খেলা করে। তাকে নিমর্মভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে। আছিয়ার নির্যাতনের পর কঠোর আইন করা হয়েছে তারপরও এই নির্র্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। আমি মৃত্যুর আগে শিশু মেয়ের এই নির্যাতনের সর্বোচ্চ শাস্তি দেখে যেতে চাই। 

চড়আড়ালিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোঃ জহিরুল ইসলাম জাজু বলেন, যদি এই ইউনিয়নের শাসক ভাল হতো, তা হলে এধরণের ঘটনা ঘটতে পারতো না। অতএব এ ইউনিয়নের শাসক-কর্তা হলো বর্তমানে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজীরা। তারা দেশকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। বর্তমানে এ এলাকার ঘরে ঘরে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। এ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে, প্রয়োজন হলে আমরা চড়আড়ালিয়াবাসী সরকারের বর্তমান স্বরাষ্ট্রউপদেষ্টার কাছে যাবো, এই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য। 

তিনি আরো বলেন, যারা ধর্ষণ করেছে তাদের কোনো কাজ নেই, তাদের একটাই লক্ষ্য, কার বাড়ি থেকে লুট করে আনবে এবং খাবে, সে অপেক্ষায় বসে থাকে সব সময়। তারা এলাকায় হিরোইন, ইয়াবা, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক বিক্রি করে এবং মেয়েদের উত্ত্যক্ত্য করে এবং সুযোগ বুঝে ধর্ষণ করে। এবার ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে কেবল মাত্র স্কুলের দুই শিশু শিক্ষার্থী বলে। আমাদের এই এলাকার অনেক মহিলা তাদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এসব নির্যাতিত মহিলারা ইজ্জতের ভয়ে কাউকে কিছু জানায়নি। এছাড়া অনেক প্রবাসীদের স্ত্রী তাদের লালসার শিকার হয়েছে।

এ সময় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, চরআড়ালিয়া ইউনিয়নের সমাজ সেবক ও বিশিষ্ট শিল্পপতি আতাউর রহমান মিঠু, চরআড়ালিয়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সভাপতি মোঃ জহিরুল ইসলাম জাজু, ইউনিয়ন বিএনপি'র সাংগঠনিক সম্পাদক মো: ইউনুস আলী মেম্বার, নরসিংদী জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান সরকার, নরসিংদী জেলা যুবদলের সদস্য মামুনুর রশীদ মামুন, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নূর আলম কাজী, পূর্ব বাঘাইকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু মুসা, বিদ্যালয়ের সভাপতি হাবিবুর রহমান, জেলা ছাত্র নেতা সাব্বির ভূইয়াসহ এলাকার সর্বস্তরের জনগণ।

উল্লেখ্য, সোমবার (৭ এপ্রিল) বিকেল তিনটার দিকে দুই বান্ধবী চরআড়ালিয়া গ্রামের কাইয়ুম ও মুন্নার সাথে ঘুরতে বের হয়। তারা সারা বিকেল ব্যটারিচালিত অটোরিকশাযোগে বাঘাইকান্দী এলাকা থেকে নরসিংদী রেলওয়েস্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরাঘুরি এবং খাওয়া দাওয়া করে। পূর্ব থেকেই কাইয়ুম ও মুন্না তাদের বন্ধুদের পূর্ব বাঘাইকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থাকতে বলে। সে অনুযায়ী অন্য বন্ধুরা স্কুলের সামনে অপেক্ষা করতে থাকে। এক পর্যায়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে অটোরিকশাযোগে তাদের নিয়ে পূর্ব বাঘাইকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে যায় কাইয়ুম ও মুন্না। সেখানে যাবার পর এক ছাত্রীকে জোরপূর্বক স্কুলের পাশে জনৈক নিক্সন মেম্বারের বাড়ির ছাদে নিয়ে যায় ইসরাফিল, সাইখুল, রমজান ও কাইয়ুম এবং অপর ছাত্রীকে মুন্না, ইমরান, রাজ্জাক, আব্দুর রহমান নদীর পাড়ে নিয়ে যায় এবং সেখানে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়। এসময় ধর্ষিতারা চিৎকার দিতে চাইলে ধর্ষণকারীরা ইট হাতে নিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করবে বলে হুমকি প্রদান করে। পরে তারা নিজ বাড়ি ফিরে গেলে তাদের অবস্থা দেখে পরিবারের সদস্যরা ঘটনা জানতে চাইলে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ পায়। এঘটনায় ভুক্তভোগীদের পরিবার রায়পুরা থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখ্য করে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) সুজন চন্দ্র সরকার বলেন, এ ঘটনায় মামলা রুজু হয়েছে। ভুক্তভোগীদের মেডিকেল টেস্টসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।