খেলাধুলা

সব ভুলে ক্যাম্পে ফেরার প্রস্তুতি মেয়েদের

প্রিন্ট
সব ভুলে ক্যাম্পে ফেরার প্রস্তুতি মেয়েদের

ছবি : সংগৃহীত


প্রকাশিত : ২৯ মার্চ ২০২৫, দুপুর ২:২৩

বাড়ির পাশে ফুল বাগানে শাড়ি পরে ছবি তুলে তা শেয়ার করছেন কেউ। আবার কেউ কেউ পাহাড়ের কোলে বসে সেলফি তুলে তা সামাজিক মাধ্যমে ছেড়েছেন। ফুটবল থেকে দূরে থাকা সানজিদা আক্তার-ঋতুপর্ণা চাকমাদের সময়টা যাচ্ছে এখন পরিবারের সঙ্গে হাসি আর আনন্দে। 


এক মাসের বেশি সময় ক্যাম্প ছেড়ে যাওয়া মেয়েরা ভুলে যেতে চায় পিটার বাটলারের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া নেতিবাচক বিষয়গুলো। সব ভুলে এখন ক্যাম্পে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তহুরা খাতুন-শামসুন্নাহাররা। নারী এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের প্রস্তুতির জন্য আগামী ৬ এপ্রিল ক্যাম্পে ফেরার কথা জাতীয় নারী ফুটবলারদের। বাটলারের অধীনে অনুশীলন বয়কট করা ১৮ নারী ফুটবলারও সেদিন যোগ দেবেন। তাদের নমনীয় হওয়াটা বাংলাদেশ নারী ফুটবলের জন্য ইতিবাচক বটে।


বডি শেমিংসহ কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলা সাবিনা খাতুন-মাসুরা পারভীনরা অনুশীলন বয়কট করেন। সিনিয়রদের ছাড়াই সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করে আসে বাংলাদেশ দল। দুটি ম্যাচে হারলেও তরুণ এবং নতুন মেয়েদের নিয়ে ভবিষ্যতের দল গঠনের কাজ করতে থাকেন বাটলার। কিন্তু নারী সাফ জিততে যাদের বেশি অবদান, তাদের বাদ দিতে চায় না বলে বাফুফে মোট ৫৫ জনকে চুক্তির আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেয়। ৩৭ জন চুক্তি করলেও বিদ্রোহী ১৮ ফুটবলার সেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেননি। 

মূলত কোচ ইস্যুতে তাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক আলোচনা হওয়ায় ট্রমায় চলে গিয়েছিল মেয়েরা। তাই ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখের পরে ছুটি নিয়ে যে যার মতো করে নিজ বাড়িতে চলে গিয়েছে। তবে ঈদে যাওয়ার আগে বাফুফে থেকে টাকা নিয়ে যেতে পারত। এবার চুক্তি না করাতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মেয়েরা। শুক্রবার সমকালের সঙ্গে আলাপে এ বিষয়টা স্বীকার করেছেন এক নারী ফুটবলার, ‘আমরা যদি চুক্তিতে থাকতাম, হয়তো আমরা বেতন পেতাম। তখন আরও বেশি ভালো লাগত আর ঈদটা একটু বেশি ভালোভাবে কাটাতাম।’

মেয়েদের আয়ের উৎসই হলো ফুটবল। তাই এবার বেতন পাননি বলে অনেকের ঈদটা যেমন ভালো কাটবে না, তেমনি করে অনেক দিন পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারার তৃপ্তিও আছে। ‘দেখেন আমি যখন ক্লাস সিক্সে উঠছি, তখন বাফুফের ক্যাম্পে চলে গিয়েছিলাম। ২০১৫ সালের পর থেকে এই পর্যন্ত বেশির ভাগ সময়ই ছিলাম ক্যাম্পে। পরিবারের সঙ্গে সেভাবে সময় কাটাতে পারিনি। এবার অনেক দিন বাড়িতে আছি বলে ভালো লাগছে। পরিবারও খুশি। বাড়িতে ঈদ করব বলে আমি এবং আমার পরিবার অনেক খুশি। আর যা কিছু হয়েছে আমি এগুলো নিয়ে পরিবারের সঙ্গে আলোচনাও করি না। খেলা ও পরিবার আমার কাছে দুটি ভিন্ন জিনিস’– পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো নিয়ে নিজের উচ্ছ্বাস এভাবেই প্রকাশ করেছেন ওই নারী ফুটবলার।

দেড় মাসের মতো বাফুফে ক্যাম্পের বাইরে আছেন নারী ফুটবলাররা। এই সময়ে অনেক কিছু উপলব্ধি করেছেন তারা। কোচের বিরুদ্ধে গিয়ে আন্দোলন করাটা যে সঠিক ছিল না, তা বুঝেছেন। বেশ কয়েকজনই জানিয়েছেন সবার সঙ্গে কোচের ঝামেলা ছিল না। হাতেগোনা কয়েকজনকে কোচ পছন্দ করতেন না। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক নারী ফুটবলার জানিয়েছেন, অনেকেই নাকি মোবাইল ফোন নিয়ে অনুশীলনে যেতেন, ‘সত্যি বলতে কি সব মেয়ের সঙ্গে কোচের ঝামেলা হয়নি। কিছু কিছু ফুটবলারের সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্য হয়েছে। আমার সঙ্গে কোনো সমস্যা হয়নি। যেহেতু ফুটবল খেলা একটা টিম ওয়ার্ক, সেহেতু দলের সঙ্গে থাকতে হয়েছে।’

বিদ্রোহীরা সব ভুলে ক্যাম্পে ফিরবেন। কিন্তু এখন দেখার বিষয় পিটার বাটলার সেই মেয়েদের কীভাবে গ্রহণ করেন।