লালমনিরহাটে পবিত্র ঈদ উল ফিতরকে সামনে রেখে অনবরত পোশাক তৈরির কাজে ঘুরছে সেলাই মেশিনের চাকা। সেই সঙ্গে ঘুরছে সংসারের চাকাও। দম ফেলার সময় নেই দর্জিদের। গভীর রাত পর্যন্ত কাপড় কাটা আর সেলাই কাজ চলছে সমান তালে। পবিত্র ঈদ উল ফিতর ঘনিয়ে আসায় দর্জিদের ব্যস্ততাও বাড়ছে। পবিত্র ঈদ উল ফিতরকে কেন্দ্র করে অর্ডারের চাপে দর্জিপাড়ায় ব্যস্ততাও বেড়েছে বেশ।
পবিত্র ঈদ উল ফিতরকে সামনে রেখে ফ্যাশন-সচেতন আর রুচিশীল ব্যক্তিরা ছুটছেন জামা তৈরির কারিগরদের কাছে। আগে ভাগেই নিজেদের পছন্দের জামা-কাপড় বানিয়ে রাখছেন তারা। চাঁদ রাতের আগেই ক্রেতারাদের হাতে পোশাক তুলে দিতে দিন-রাত কাজ করছেন জামা-প্যান্ট তৈরির কারিগররা। ধনী-গরীব সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তাদের নতুন পোশাকের সন্ধানে। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর পবিত্র ঈদ উল ফিতরের দিন নতুন পোশাক পরে ঈদের নামায় আদায় করবেন।
সরেজমিনে লালমনিরহাট জেলা সদরের কয়েকটি টেইলার্স ঘুরে দেখা যায়, ফ্যাশন সচেতন নারী-পুরুষ ভিড় জমাচ্ছেন নামিদামি টেইলার্সগুলোতে। আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের পোষাক তৈরিতে মেতে উঠেছেন তারা। অন্য সময়ের চেয়ে পবিত্র ঈদ উল ফিতরের সময় মজুরিও বেশি। তারপরেও একাধিক নতুন পোশাক তৈরি করিয়ে নিচ্ছেন তরুণ-তরুণীরা। শহরের নামিদামি টেইলার্সগুলোতে ২০ রোজা থেকেই অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিরতিহীন সেলাই মেশিনের যান্ত্রিক শব্দ বলছে, দম ফেলার ফুরসত নেই কারিগরদের। আর এ ব্যস্ততা চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ীতে সুশ্রী টেইলার্সের মালিক সুমনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মেয়েরা যেমন নিত্য নতুন বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক বানাতে আসছেন, তেমনি পবিত্র ঈদ উল ফিতরের সময় শার্ট-প্যান্টের চেয়ে ছেলেদের বেশি আগ্রহ পাঞ্জাবিতে। সারা বছরের চেয়ে ঈদের সময়ে কাজের চাপ বেশি থাকে। এ সময়ে আমরা একটু বাড়তি ইনকাম করি।
মেসার্স শাপলা টেইলার্সের মালিক মোঃ মোকছেদুর রহমান বলেন, গতবারের মতো এবারও অর্ডার বেশি। রাত জেগে কাজ করতে হচ্ছে। কাজের চাপের কারণে খাওয়া ঘুমের সময় পাচ্ছি না।
শাপলা টেইলার্সে কারিগররা প্রত্যেকে দিন গড়ে ১০-১৫টি পোশাক সেলাই করছেন। কারিগর রাজ্জাক আলী বলেন, প্রচুর কাজের চাপ। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সময় ধরে কাজ করতে হচ্ছে। মজুরি খুব বেশি বাড়েনি। এদিকে অতিরিক্ত কাজের চাপে বিশ্রামের সময় নেই।
পোশাক তৈরি কারিগররা অভিযোগ করে বলেন, আগের মত এই পেশায় মানুষ থাকতে চায় না। কারণ সব কিছুর দাম বাড়লেও আমাদের মজুরি বাড়েনি। আর মানুষ রেডিমেড জামা কাপড় এখন বেশি কেনে।
দর্জির দোকানে পোশাক বানাতে আশা আকলিমা খাতুন বলেন, ছোটবেলা থেকেই মেসার্স শাপলা টেইলার্স পোশাক বানাতে দেই। এবারও কয়েক সেট পোশাক বানিয়েছি। তবে দর্জিরা এবার মজুরি কিছুটা বেশি নিয়েছে। তৈরি পোশাকের দোকানে সব পোশাকের ডিজাইন প্রায় একই রকম হয়। তাই আমি প্রতি ঈদেই নিজের পছন্দ মতো কাপড় কিনে দর্জির কাছ থেকে বানিয়ে নিই।
এ বছর জর্জেট, কাতান, সিল্ক, ভেলভেট, নেট, তসর, টিস্যু, জরি, চুমকি, কুন্দনের কাজ করা পোশাকের চাহিদা বেশি। পাশাপাশি সুতি কাপড়ের পোশাকের বাজারও ভালো রয়েছে বলে জানান টেইলার্স মালিকরা।
মতামত