সারাদেশ

‘এমন ঈদযাত্রা আগে কেউ কখনও দেখেনি’

প্রিন্ট
‘এমন ঈদযাত্রা আগে কেউ কখনও দেখেনি’

ছবি : সংগৃহীত


প্রকাশিত : ২৮ মার্চ ২০২৫, দুপুর ১২:২১

ঈদ উপলক্ষে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে মানুষ। যে কারণে সড়ক, নৌ ও রেলপথে যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। তবে যতটা ভিড় হওয়ার কথা ছিল তেমনটা চোখে পড়েনি। কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে সরকারি লম্বা ছুটি থাকায় এবারের ঈদযাত্রা অনেকটাই স্বস্তিদায়ক হয়েছে। এছাড়াও অনেকেই তাদের পরিবার পরিজনকে আগে আগে পাঠিয়ে দিয়েছে।


সংশ্লিষ্টরা বলেন, ঈদযাত্রায় শুক্রবার মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলের পর থেকে বিভিন্ন পোশাক কারখানা ছুটি হওয়ায় যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার রাত থেকে যানবাহনের চাপ বেড়েছে বেশি। আজ দুপুর পর আরও চাপ বাড়বে।

রাজধানীর গাবতলী, কল্যাণপুর, মহাখালী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সকালে দেখা যায় বাস কাউন্টারগুলোতে অপেক্ষা করছেন শত শত যাত্রী। পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন, মহাসড়কে যানজট না থাকায় নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়েছে সকল বাস।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকা ও এর আশপাশের জেলা থেকে প্রায় দেড় কোটি মানুষ নিজ নিজ গন্তব্যে যাত্রা করবে। দেশের এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরও তিন থেকে সাড়ে ৩ কোটি মানুষের যাতায়াত হতে পারে। তাদের ৭৫ শতাংশ সড়কপথে, ১৭ শতাংশ নৌপথে এবং ৮ শতাংশ রেলপথে যাতায়াত করবে।

নাটোরগামী ফরিদুর জামান জানান, আমি ঢাকায় থাকছি ১৪ বছর ধরে। প্রতিবছরই ঈদে বাড়ি যাই তবে এমন ঈদযাত্রা আগে কেউ কখনও দেখেনি। এবারে খুব স্বস্তিকেই বাড়ি ফিরেছি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বের হয়ে রাত সাড়ে নয়টায় বাড়ি পৌঁছেছি।

শুক্রবার (২৮ মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে উপচে পড়া মানুষের ভিড় ট্রেনগুলোতে। স্ট্যান্ডিং টিকিট না মেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের জানালা বেয়ে ছাদে উঠেছে অনেক যাত্রী। রেলে ভিড় থাকলেও এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তির বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।

এছাড়াও এবারের ঈদযাত্রায় উত্তরের পথে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লেও যানজট নেই। ফলে স্বস্তিতে আছেন যাত্রীরা। এদিকে মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশে ৬৫ কিলোমিটার যানজট নিরসনে পুলিশের সাড়ে ৭০০ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।

তবে এবারের ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বেশি স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছেন ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের যাত্রীরা। শুক্রবার সকাল থেকে মহাসড়কের কুমিল্লার ১১৪ কিলোমিটার অংশে একই দৃশ্য দেখা গেছে। মহাসড়কের দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রাম অংশে মোট ১২টি স্থান যানজটের হটস্পট বলে চিহ্নিত করেছে হাইওয়ে পুলিশ। চিহ্নিত সেসব স্থানে পুলিশি তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। 

মহাসড়কে এক হাজারের অধিক পুলিশ সদস্য, দুই শতাধিক রোভার স্কাউট সদস্য এবং সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্য নিয়োজিত আছেন। যানজট ছাড়াই নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।

ফেনীগামী এক যাত্রী জানান, এবারে খুব স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরেছি। রাস্তা ফাঁকা ছিল। তেমন কোনো যানজট ছিল না। এমন ঈদযাত্রা আমি আগে দেখেনি।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মোরশেদ বলেন, যানজট নিরসনে আমরা তৎপর রয়েছি। টহল টিমও বাড়ানো হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ অংশে মানুষকে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হবে না বলে আশাবাদী।

এদিকে পদ্মা সেতু হবার পর জৌলুস হারিয়েছে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। তবে গতকাল দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় যাতায়াতে নৌপথে যাত্রী বেড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) একজন কর্মকর্তা জানান, ‘স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যাত্রী কিছুটা বাড়লেও তা চাপের পর্যায়ে পৌঁছেনি। আশা করছি, শুক্রবার (আজ) থেকে যাত্রী বাড়বে।’