ছবি : ঢাকা ইনসাইটস
নরসিংদীতে উদ্ধারকৃত ৯৬ কেজি গাঁজা বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক (ডিবি) এস এম কামরুজ্জামান ও কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক খন্দকার জাকির হোসেন এর বিরুদ্ধে।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে শনিবার (১৫ মার্চ) সকালে তাৎক্ষনিক নরসিংদী পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করার আদেশ দেন নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুল হান্নান। এ ঘটনার কয়েক ঘন্টার পরই দুপুরের দিকে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি একেএম আওলাদ হোসেন আরেক আদেশে অভিযুক্ত দুই পরিদর্শককে ঢাকায় বদলির আদেশ দেন।
এদিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নথি ঘেঁটে জানা যায়, গত ৪ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার সৃষ্টিগড় গ্রামের জনৈক মনির হোসেনের মালিকানাধীন লটকন বাগানে অভিযান চালিয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৬ টি প্লাস্টিকের বড় বস্তায় ১৬ কেজি করে মোড়ানো মোট ৯৬ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে। পরবর্তীতে বিপুল পরিমাণ এই গাঁজা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে আনা হয়।
পরদিন ৫ ফেব্রুয়ারি ৯৬ কেজি গাঁজা উদ্ধার হয়েছে মর্মে সাংবাদিকদের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। পরে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় থেকে কাগজে কলমে আদালতে পাঠানো হয়েছে মর্মে দেখানো হয়। প্রকৃতপক্ষে বিপুল পরিমাণ এই গাঁজা আদালতের মালখানায় নেয়া হয়নি। আদালতে নেয়ার আগেই পুলিশ এই মাদকদ্রব্য বিক্রি করে টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নেন। মাদক বিক্রি করার দুই দিন পর কাগজে কলমে গত ১৭ মার্চ এ মাদকদ্রব্য ধ্বংস করার এক প্রমানপত্র তৈরী করা হয়।
নরসিংদীর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রাকিবুল হক স্বাক্ষরিত ‘ম্যাজিস্ট্রেটের রেকর্ডের জন্য আদেশনামায়’ লেখা রয়েছে, “১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ অত্র জিডির জব্দকৃত আলামত হইতে ৯৬ কেজি গাঁজা ধ্বংসের জন্য নথি উপস্থাপন করা হইল। দেখিলাম, আমার উপস্থিতিতে বর্ণিত আলামত ধ্বংস করা হইল।”
পুলিশ ও আদালতের একটি সুত্র জানায়, দীর্ঘ দিন ধরেই নরসিংদীর আদালত প্রাঙ্গনে পুলিশ বিচারক মিলে এ অবস্থা চালু করেছেন। আগে প্রকাশ্যে মাদকদ্রব্য পুড়ানো হলেও এখন আর তা করা হয় না।
এসব বিষয়ে ডিবির সদ্য বিদায়ী পরিদর্শক কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের অফিসার আলামত জব্দ করেছে। তা ধ্বংস তালিকা করে কোর্টে পাঠিয়েছে। কোর্ট রিসিভ করেছে। এই অর্ডারও আমার অফিসে আছে। এখন কোর্ট ধ্বংস করেছে, না করে নাই, সেটা তো কোর্টে ব্যাপার। এখানে আমারতো কোনো কিছু না।
পুলিশের একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, ৯৬ কেজি গাঁজা মাধবদী আলগী এলাকার মাদক ব্যবসায়ী মায়া প্রধানের কাছে বিক্রি করে দেন। প্রতি কেজি গাঁজার বাজার মূল্য ২৫ হাজার টাকা হলেও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর কাছে ১৫ হাজার টাকা কেজি ধরে ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। তবে বিক্রিত গাঁজার মধ্যে ৪৫ কেজি গাঁজা মায়ার কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। বাকী গাঁজা ডিবির ওসি কামরুজ্জামানের হেফাজতেই রয়েছে। আদালতের মালখানায় কোনো মাল প্রেরণ করা হয়নি।
এব্যাপারে নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুল হান্নান বলেন, তথ্য প্রমাণ ও অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে এ আদেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: কলিমুল্লাহকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অনুসন্ধানপুর্বক তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিদেন দাখিল করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
মতামত