অপরাধ

দেশে দুই বছরে ধর্ষণের শিকার ৯৭৫, ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা ৭১

প্রিন্ট
দেশে দুই বছরে ধর্ষণের শিকার ৯৭৫, ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা ৭১

ছবি : ফাইল ফটো


প্রকাশিত : ১৫ মার্চ ২০২৫, দুপুর ১২:৩৫

দেশে গত দুই বছরে, অর্থাৎ ২০২৩ ও ২০২৪ এবং ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ২৬ মাসে ১ হাজার ৬০ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৭৭ জন। এ ছাড়া ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৭১ জন এবং ১৩ জন আত্মহত্যা করেছেন। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) গত ২৬ মাসে প্রতিবেদন ঘেঁটে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।


আসকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৫৭৪টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৩৮ জন। এ ছাড়া ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৩৩ জন এবং ৫ জন আত্মহত্যা করেছেন। ২০২৪ সালে মোট ৪০১টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৩৪ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন। দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০৫ জন। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮৫ জন। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ৩৪ জন। ধর্ষণের পর ৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে ও আত্মহত্যা করেছেন ১ জন।

আসকের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ধর্ষণের ঘটনা রয়েছে ২৫০টি এবং জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের ঘটনা ১৫১টি। ২০২৫ জানুয়ারি মাসে ধর্ষণের শিকার ৩৯ জন, ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা ৩ এবং আত্মহত্যা ১, ফেব্রুয়ারিতে ধর্ষণের ঘটনা ৪৬টি, ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা ১ ও আত্মহত্যা শূন্য। এ ছাড়া ২০২৩ সালে গড়ে প্রতি মাসে ৪৮ জন, ২০২৪ সালে গড়ে প্রতি মাসে ৪২ জন (সাবেক পতিত সরকার শেখ হাসিনার আমলে) এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে ২৫ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া চলতি বছরে গড়ে এখন পর্যন্ত ৪২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।

সম্প্রতি মাগুরায় আট বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে চলমান সহিংসতা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও হয়রানির বিরুদ্ধে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজপথে দিনরাত প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। ক্ষোভে ফেটে পড়েছে দেশের নাগরিক সমাজ।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মামলার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন পরিবর্তন করার কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। মামলার তদন্তের সময় ৩০ থেকে কমিয়ে ১৫ দিন করা হচ্ছে। ধর্ষণের মামলায় ৯০ দিনের মধ্যে বিচার করার বাধ্যবাধকতা রাখা হচ্ছে। অংশীজনদের সঙ্গে কিছু পরামর্শ করে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে বলে সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

অপরাধীর শাস্তির উদ্দেশ্য নিয়ে এ বি এম নাজমুস সাকিব বলেন, ‘শাস্তির উদ্দেশ্য হলো দুটো—এক. যে অপরাধী তাকে আমরা সমাজে ক্ষতিকর মনে করি। সে যদি সমাজের বাইরে থাকে, তাহলে এটা সবার জন্য একটা থ্রেট। তাই তাকে আমরা গ্রেপ্তার করে প্রিজনে রাখি। দুই. সে যেহেতু সমাজে একটা ক্ষতিসাধন করেছে, তাকে সংশোধন করে আবার সমাজে পাঠানো। কিন্তু আমরা দেখছি, এমন ধর্ষণের ঘটনার কোনো বিচারই হচ্ছে না। এমন ঘটনা আলোচিত হলে গ্রেপ্তার হয় ঠিকই। কিন্তু কিছুদিন পর বিভিন্ন আইনে ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধী বের হয়ে যায়। তখন সমাজে একটা মেসেজ যায়—এমন অপরাধ করতে কোনো ভয় নেই। একজন ক্রিমিনার যখন জানে যে সে পার পেয়ে যাবে, তখন অপরাধ করতে সে দ্বিধা করে না।’